Saturday, October 8, 2011

ঘোষণা ছাড়াই বেড়েছে ৬৭ রুটের বাস ভাড়া


বেড়ে গেছে দূরপাল্লার ৬৬ জেলার ৬৭ রুটের বাস ভাড়া। গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল থেকে দেশের দূরপাল্লার ৬৭ রুটের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করে। ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। টার্মিনালে এসে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার খবরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। এবার স্থান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অস্বাভাবিকভাবে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে নগরীর টার্মিনালগুলোতে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাস চালক ও শ্রমিকদের অনৈতিক দাবির মুখে তারা প্রতিবাদ করেছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যাত্রীরাও নাজেহালের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রতি সরকার সিএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি করায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর জন্য আমাদের সংগঠনকে অনুমোদন দেওয়া হয়। আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর সভা করে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। গতকাল থেকে ওই ভাড়া কার্যকর করেছি। এবারও সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ভাড়া সামান্য বাড়িয়েছি। আশা করছি এ ভাড়া সহনীয়।

সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে_ ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, নরসিংদী, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জ। টার্মিনালগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাসের মালিকরা যাত্রীদের বাড়তি ভাড়ার টিকিট না দিলেও পুরনো টিকিটের গায়ে সিল মেরে দিচ্ছেন। এভাবেই আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, সরকার যে হারে জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে পরিবহন মালিকরা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে ভাড়া বাড়িয়েছেন।

ভাড়ার বিষয়ে বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২১ থেকে ২৮টি কারণ বিবেচনা করে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ১০% বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ঐকিক নিয়মে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাদের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৫ পয়সা করে এবং সিএনজিতে ১৪ পয়সা। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভাড়া বৃদ্ধির এ হার মানতে নারাজ বাস মালিক সমিতির নেতারা। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জুবায়ের নঈম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে তারা লিখিতভাবে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪৫ পয়সা ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। এখন নতুন করে দাম বাড়ায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু সরকার ৫ পয়সা বাড়িয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করার কথা বলছে।

এ হিসাবে এখনো তাদের দাবি অনুযায়ী ৩০ পয়সা কম রয়েছে। সরকার ঘোষিত ভাড়া বৃদ্ধির হার মানলে তাদের প্রতিদিন লোকসান গুনতে হবে। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ১৯ মে বাস, সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ ও ৫০ পয়সা করে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সে সময় প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ১ টাকা ২০ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ৫৫ পয়সা এবং মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। দূরপাল্লার ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ৯৪ ও ৯৭ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বগুড়াগামী এসআর পরিবহনে গতকাল টিকিট কেটেছেন ৩০০ টাকা দিয়ে। দু-দিন আগে ওই ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। একইভাবে নওগাঁর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকার স্থলে ৩৮০ টাকা। জয়পুরহাটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে দিনাজপুরের ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা। গতকাল হানিফ ও বাবলু পরিবহনে ওই ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা। সৈয়দপুরের ভাড়া ছিল ৪৫০ টাকা, গতকাল থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪৮০ টাকা।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিক পরিবহনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকার জায়গায় ৩৮০ টাকা। বান্দরবানের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকার জায়গায় ৪৮০ টাকা। এছাড়া রাঙ্গামাটির ভাড়া ৪৫০ টাকার জায়গায় ৪৮০ টাকা। যাত্রাবাড়ী এলাকার জনপথ মোড়ের হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজারের টিকিট ৫০০ টাকার জায়গায় ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বাস টার্মিনালে কথা হয় বাসাবো এলাকার এনামুলের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের নজরদারি না থাকায় বাস ভাড়া বেড়েছে লাগামহীনভাবে। গতকাল তিনি ফেনীর টিকিট কিনেছেন ২৫০ টাকার জায়গায় ৩০০ টাকায়।

মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। ভাড়া বাড়ানোর কারণে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভের কমতি নেই। সেখানে আরও দেখা গেছে, একতা পরিবহনে ঢাকা থেকে গাইবান্ধার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা। রংপুরের ভাড়া ৪০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা। কুড়িগ্রামের ৪৫০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নীলফামারীগামী আবুল কালাম বলেন, টিকিট কিনতে গিয়ে জানতে পারি টিকিটের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু টিকিটের গায়ে লেখা রয়েছে আগের দাম।

জানতে চাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সৈয়দ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম বাড়ানোর ফলে যানবাহনের জন্য প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া ৫ পয়সা এবং সিএনজির ভাড়া ১৪ পয়সায় নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ২৫ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এই রেটে বাস চালালে লোকসান গুনতে হবে। সরকার কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা না দিয়ে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এটা ভেবেচিন্তে করলে এমনটা হতো না।

No comments:

Post a Comment