ঢাকা, অক্টোবর ০৮ - প্রতিষ্ঠার ৯০ বছর পূর্তি উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে উদযাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ।
এ উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে জড়ো হতে থাকেন বিভাগের শত শত সাবেক শিক্ষার্থী। তাদের অভ্যর্থনা জানায় বিভাগের বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অ্যালামনাই আয়োজিত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন ঘোষণা করে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাংলা বিভাগ সামনে থেকে অংশ নিয়েছে, নেতৃত্ব নিয়েছে।
"নাগরিকদের দেশপ্রেম ও ভাষার প্রেম ব্যতীত কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আর বাংলা বিভাগ শিক্ষার্থীদের মাঝে এটাই ছড়িয়ে দেয়," বলেন তিনি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে অধ্যাপক আরেফিন বলেন, "সম্পর্কই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সত্য। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সেটিই দেখা যায়। সেই সম্পর্কই দৃঢ় হয়।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভাগের চেয়ারম্যান সিদ্দিকা মাহমুদ বলেন, "বিভাগের ৯০ বছরের এই মিলন মেলা দেখে আমাদের মন ভরে গেছে। আমরা আশাতীত সাড়া পেয়েছি।"
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় সংস্কৃতির সঙ্গে থাকলেও ১৯৩৭ সালে আলাদা নামে আত্মপ্রকাশ করে বাংলা বিভাগ। ১৯৫০ সালে আবার ফিরে আসে আগের অবস্থানে। ১৯৭০ সালে বাংলা থেকে আলাদা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সংস্কৃত ও পালি বিভাগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাবেক আট শিক্ষার্থীকে সম্মাননা জানানো হয়। এদের মধ্যে অধ্যাপক আশরাফ হোসেন সিদ্দিকী (১৯৫০), রওশন আরা রহমান (১৯৫৩), অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম (১৯৫৪), অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম (১৯৫৪) উপাচার্যের হাত থেকে সম্মাননাপত্র নেন।
সম্মাননা পাওয়া অন্য চার শিক্ষার্থী অধ্যাপক কাজী দীন মুহম্মদ (১৯৪৯), অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম (১৯৫০), অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (১৯৫১) এবং অধ্যাপক আশরাফ ফারুকী (১৯৫৪) অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
'ফিরে যাওয়া, ফিরে আসা'
অনুষ্ঠানে সম্মাননা নিয়ে রওশন আরা রহমান বলেন, "আজকের এই মিলন মেলায় বর্তমান শিক্ষার্থীরা যেভাবে আনন্দিত, উৎফুল্ল। আমার মধ্যে তার কোনো কমতি নেই।
"আজ এই ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আমি যেন ফিরে গেছি আমার সময়ে। এটি জীবনের একটি দুর্লভ সময়, এ সময় বারবার জীবনে ফিরে আসবে না।"
বিভাগের শতবর্ষ উদযাপনের সঙ্গী না-ও হতে পারেন- এ শঙ্কা থেকে বর্ষীয়ান এই সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, "আজকের এই দিনকেই আমি শতবর্ষ ধরে নিয়ে উদযাপন করে গেলাম।"
রওশন আরা ৫২'র ২১ ফেব্র"য়ারির অগ্নিগর্ভ সে সময়ের স্মৃতিচারণও করেন।
অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম (১৯৫৪) বলেন, "আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে গিয়েছি সেকালে। এ কালের সঙ্গে তার বিরাট তফাত। তখন আজকের রোকেয়া হল ছিলো না। এখানে ছিলো উইমেন স্টুডেন্ট রেসিডেন্ট নামে একটি বাড়ি। সকালে গেট খোলার পর আমরা বের হতাম, আবার ঢুকতে হতো সন্ধ্যার আগেই।"
তখন ছাত্র-ছাত্রী একসঙ্গে থাকার নিয়ম ছিলো না জানিয়ে তিনি বলেন, "কমনরুম আর ক্লাসের বাইরে শিক্ষকের জন্য অপেক্ষা করতাম। ঘোমটা দিয়ে শিক্ষককের সঙ্গে ক্লাসে ঢুকে প্রথম বেঞ্চে বসতাম। ক্লাস শেষে আবার শিক্ষকের সঙ্গেই বের হয়ে যেতাম।"
৯০ বছর পূর্তির এ অনুষ্ঠানে অনেককেই দেখা গেলে পুরনো বন্ধুদের খুঁজে বেড়ানে। কর্মজীবনে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও তারা এক হয়ে গিয়েছিলেন এ মিলনমেলায়।
এক জনকে পাওয়া গেল, যিনি ঘুরে ঘুরে সবাইকে কেবল ব্যাচ জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছেন। সঙ্গে জানতে চাইছেন, ৬১ ব্যাচের কাউকে দেখেছেন কি-না।
সিরাজগঞ্জ থেকে বাহাদুর আলী মিয়া নামে বাংলা বিভাগের এই সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, "দীর্ঘকাল ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকতা করেছি। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম, কাউকে না কাউকে পাবো। কিন্তু কাউকেই পাচ্ছি না।"
তবে সবার অবস্থা বাহাদুর আলীর মতো নয়, পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছেন প্রায় সবাই।
বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আওয়াল ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সেই ৫০ দশক থেকে প্রায় সব দশকের শিক্ষার্থীরাই আজ এসেছেন। তাদের সবাইকে পাওয়ার বিরল সৌভাগ্য আমি অর্জন করেছি।
"আজ যেন আমাদের কোনো ব্যবধান নেই। এ বিভাগে পড়েছি বা পড়ছি, এটাই একমাত্র পরিচয়। এমনকি বয়সের ব্যবধানও আছে বলে মনে হচ্ছে না।"
১৯৮৫-৮৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাট্যশিল্পী শিরিন বকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আজ প্রকৃতিও যেন বাংলা বিভাগের সঙ্গে মিতালী পাতিয়েছে।"
রোদ-বৃষ্টি-মেঘলা আবহাওয়ার এই দিনে তিনি বলেন, "সাহিত্য অধ্যয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা প্রকৃতিকেও বোঝার চেষ্টা করেছি, কাজ করেছি।"
তিনি জানান, ১ ফাল্গুন বসন্ত উৎসব বাংলা বিভাগই প্রথম উদযাপন করে, যা এখন চারুকলা অনুষদ বর্ধিত কলেবরে করছে।
No comments:
Post a Comment