Saturday, October 8, 2011

কুমিল্লায় গ্যাস বিস্ফোরণে ছয়টি ভবন বিধ্বস্ত


কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড় এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চারতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ�                                                                              কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড় এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চারতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ।
কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড় এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্যাস বিস্ফোরণে ছয়টি ভবন বিধ্বস্ত হয়ে ১০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, রাত তিনটার দিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসিত রঞ্জন মজুমদারের চারতলা ভবনের নিচতলার গ্যাসের লাইনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের নিচতলার চারটি কক্ষের ছাদ উড়ে যায় এবং আগুন ধরে। ওই ভবনের উত্তর পাশে আইনজীবী বিজয় কুমার মজুমদারের একতলা টিনশেড ভবনে আগুন ধরে যায়। পূর্ব পাশে থাকা কুমিল্লার সাবেক সহকারী সিভিল সার্জন আক্তারুজ্জামানের পাঁচতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ ও লোহার গ্রিল বিধ্বস্ত হয়। এর লাগোয়া ঠিকাদার শাহনেওয়াজের ভবনের তিনতলা পর্যন্ত কাচ ভেঙে যায়। আরও দুটি টিনশেড ভবনের টিনের চাল উড়ে যায়।
খবর পেয়ে দমকলবাহিনী গিয়ে আগুন নেভায়। ওই সময়ে বাখরাবাদের লোকজন এসে গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন বিদ্যুতের লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসী ও দমকলবাহিনী মরণ দেবনাথ (৫০), শিল্পী দেবনাথ (৩৫) ও অপু দেবনাথকে (১০) উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় পাঠায়। এর মধ্যে মরণের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে টিনশেডের একটি ভবন থেকে তাপসী, নীলা, সজল, পার্থ, বিষ্ণুসহ আরও দুজনকে উদ্ধার করে। এদের কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, অসিত রঞ্জনের বাসায় সাতটি চুলা থাকার কথা, কিন্তু আছে ২৮টি। অবৈধ লাইন নিয়ে তিনি এই কাজ করেছেন। ছয় মাস আগে তিনি এক লাখ টাকা জরিমানাও দিয়েছেন। ওই বাসায় তিন দিন গ্যাস ছিল না। অসিত সিলেটে বেড়াতে গেলে অন্য মেকানিক এনে ভাড়াটিয়ারা লাইন ঠিক করেন এবং গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে দেন।
প্রতিবেশী বিজয় কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিকট শব্দ শুনে আমার ছেলেকে কোলে করে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। পরে আগুন ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাই।’ তিনি এ ঘটনার জন্য অসিত রঞ্জন মজুমদারের গ্যাসলাইনকে দায়ী করেন।
তবে অসিত রঞ্জন মজুমদার দাবি করেছেন, তাঁর গ্যাসের লাইন বৈধ। ঘটনার রাতে তিনি সিলেটে ছিলেন। দুর্বল কাঠামো দিয়ে এই ভবন তৈরি এবং তিন ইঞ্চি ইটের দেয়ালের কথা তিনি স্বীকার করেছেন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অবৈধ গ্যাসলাইনের ত্রুটির কারণে ওই ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জাহান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, গ্যাসের বিস্ফোরণে ওই ঘটনা ঘটেছে। পুরো বিষয়টি তদন্তের পর আমরা এর কারণ উদ্ঘাটন করে নিশ্চিত হব।’
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ক ম আবদুস সালাম গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসিত রঞ্জনের বাসার গ্যাসের লাইনে কোনো ধরনের রেগুলেটর ছিল না। রাইজার থেকে তাঁরা সরাসরি গ্যাস নিয়েছেন। গ্যাসের প্রবাহ বেশি থাকায় ওই ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অবৈধ সংযোগ থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদ মাহবুব খানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান গতকাল শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন শেষে  বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

No comments:

Post a Comment