Thu, Oct 6th, 2011 2:05 am BdST | Dial 2000 from your GP mobile for latest news |
ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ওই বৈঠকেই জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে সরকারি অর্থায়ন বন্ধ সংক্রান্ত আইনের ২৭ (৪) ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। চলে মিষ্টিমুখ করানোর পালা।
"আমি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে", আনন্দ মিছিল থেকে বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম।
বাংলা বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র শফিউল্লাহ বলেন, "পুলিশের মারপিট ও ধর-পাকড় উপেক্ষা করে আমাদের এই আন্দোলন সফল হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।"
একই বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী মনজিত মিত্র বলেন, "আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।"
রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লুৎফার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "খবর পেয়েই আমি ক্যাম্পাসে ছুটে যাই এবং ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেই।"
"প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে এমন সমাধান দেবেন বলেই প্রত্যাশা ছিলো। তার বাস্তবায়ন ঘটেছে আজ", যোগ করেন তিনি।
এই আন্দোলন সফল হওয়ায় শুধু আনন্দই নয়, স্বস্তিও মিলেছে অনেক শিক্ষার্থীর।
গ্রেপ্তার আতঙ্ক থেকে মুক্ত হয়েছেন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র বিল্লাল হোসেন বলেন, "অনেকদিন ধরে চাপের মুখে ছিলাম। এখন স্বস্তি বোধ করছি।"
আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও ঘোষণার পর উল্লাস করেছে ছাত্রলীগও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে তারা।
প্রধানমন্ত্রীয় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ব্যতিক্রমী ওই আইনের ফলে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় পরিবারকে যে কালো মেঘ ঘিরে ছিলো- প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা কেটে গেছে। এ জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।"
তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের সব সমস্যার সমাধানের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।
১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ কলেজকে ২০০৫ সালে একটি আইনের মাধ্যমে পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। তবে এর আইনের ২৭ (৪) ধারায় বলা হয়- পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ভার তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
ওই আইন সংশোধনের দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সেদিন হাইকোর্ট ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করলে শুরু হয় গাড়ি-ভাংচুর।
টানা চারদিন আন্দোলনের পর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগেভাগে পূজার ছুটি দিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়।
তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন এবং ব্লগার-অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা।
বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে জামিনে ছাড়া পান তারা।
এরইমধ্যে উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন সঙ্কট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারাও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
এরপর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই কাক্সিক্ষত সেই ঘোষণা আসে।
No comments:
Post a Comment