Friday, October 7, 2011

সরকারের ঋণে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির শঙ্কা

Fri, Oct 7th, 2011 1:51 am BdST
Dial 2000 from your GP mobile for latest news  
আবদুর রহিম হারমাছি
প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা, অক্টোবর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এতে করে দেশে শিল্পায়নও ব্যাহত হবে।

চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সাত হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ গুণেরও বেশি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, মূলত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে গিয়েই সরকার সঙ্কটে পড়েছে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে এ কারণেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আড়াই মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে যো সাত হাজার ৮৯২ কোটি টাকা নিয়েছে, তার মধ্যে চার হাজার ১০২ কোটি টাকা এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে তুলে নিয়েছে তিন হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।

গত ২০১০-১১ অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ৩৬১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ধার করেছিল।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরীও বলছেন, সরকারের ঋণ নেওয়ার এই হার উদ্বেগজনক।

"এ অবস্থা চলতে থাকলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে। দেশে শিল্পায়ন ব্যাহত হবে", যোগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ।

মির্জ্জা আজিজ ও মুজেরী- দুজনেরই আশঙ্কা, সরকারের ঋণ নেওয়ার হার বাড়তে থাকায় বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে আরো।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অগাস্ট মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সাধারণত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আড়াই মাসেই নেওয়া হয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ১৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ধরে নিয়েছেন, এ অর্থবছরে সরকার মোট ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে পাবে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা চলে যাবে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধে। সেক্ষেত্রে সরকারের হাতে থাকবে ১৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের বাজেটে ১৫ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার, শেষ পর্যন্ত সংশোধিত বাজেটে তা ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বিদেশি ঋণ প্রবাহের গতি এবারো খুব একটা আশা জাগাতে পারছে না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে, আগে নেওয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে তার চেয়েও বেশি।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর জন্য জ্বালানি তেল কেনার অর্থ যোগাতে গিয়েই সরকার এ সঙ্কটে পড়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার বাজার দরে তেল কিনে অনেক কম দামে তা বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রগুলোতে সরবরাহ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকে মোটা অংকের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই বাড়তি টাকার যোগান দিতে গিয়েই সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে।"

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১০০ শতাংশ। আর এই সময়ে এলসি নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ১৬০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার বেশি তেল দেশে এসেছে।

"আগে আমরা দেখেছি- বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতো। কিন্তু এখন অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়নের গতিও ভালো না। এখন জ্বালানি তেলের বাড়তি খরচ মেটাতেই ঋণ নিচ্ছে সরকার", বলেন মির্জ্জা আজিজ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপির মাত্র ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে উল্লেখ করে আজিজুল ইসলাম বলেন, "এর ফলে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাবে না। সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে। শিল্পায়ন ব্যাহত হবে। আর অর্থনীতিতে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাতে বাজেটে ঘোষিত ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জন কঠিনই হবে।"

"অন্যদিকে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে। এর ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। বাড়বে মূল্যস্ফীতি," যোগ করেন এই সাবেক অর্থ উপদেষ্টা।

এ প্রসঙ্গে মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যায়। আর সরকার কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়। তাতে মূল্যস্ফীতিও বাড়ে।

"এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখি। এ অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকলে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে।"

ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই যাতে লক্ষ্যমাত্রা না ছাড়ায়- সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

No comments:

Post a Comment