Saturday, October 8, 2011

বিসিবি একাদশের ৬৫ রানে হার মুশফিকদের প্রতি সতর্ক বার্তা

undefined
প্রস্তুতি ম্যাচে প্রস্তুতিটা কী হলো! ফলাফল কিন্তু তা বলে না! জাতীয় দলের ছয় ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া বিসিবি একাদশকে ১৫২ রানে গুড়িয়ে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরেকবার স্মরণ করাল ৫৮ রানের সেই লজ্জাকে। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে শাহরিয়ার নাফিসদের ফিল্ডিং মিসের মহড়া এবং ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতি দেখে লজ্জা পাচ্ছিল সূর্যও। তাই বারবার মুখ লুকাচ্ছিল মেঘের আড়ালে। ৬৫ রানের হারের ম্যাচে ক্রিকেটারদের এমন পারফরম্যান্সে হতাশ দর্শকরাও।

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হারের পরও আত্মবিশ্বাসী অলরাউন্ডার অলক কাপালি। স্বপ্ন দেখছেন সিরিজ জয়ের, 'আমাদের নিয়মিত বোলাররা কেউ খেলেনি। এই বোলারদের বিপক্ষেই ওরা ধুঁকেছে। তাছাড়া মিরপুর উইকেটের সঙ্গে এখানকার অনেক পার্থক্য। তাই আমি সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।' কাপালির কথা কী বিশ্বাস করতে পারছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা! ক্যারিবীয় বোলিংয়ের দুই বোরিং তুন কেমার রোজ ও স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুকে ছাড়াই রামপাল-রাসেলরা যেভাবে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছে, তাই ওদের উপস্থিতিতে সফরকারীদের বোলিং যে আরও ভয়ঙ্কর হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রস্তুতি ম্যাচে হতাশার মাঝেও আশার আলো দেখিয়েছেন কাপালি। ঝলক দেখিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুলও। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও ছিল এই দুই অলরাউন্ডারের দাপট। বল হাতে ২ ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া আশরাফুল ব্যাটিংয়েও যেন ছিলেন অগি্নমূর্তি। উইকেটে এসে প্রথম বলেই গালি এবং পয়েন্টের মাঝামাঝি দুর্দান্ত এক বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন ইনিংস। স্যামির ওই ওভারের শেষ দুটি বলে আরও দুটি বাউন্ডারি। আশরাফুলের হাতে মার খেয়ে প্রথম বলে জুনায়েদকে আউট করার আনন্দও যেন মাটি হয়ে গিয়েছিল ক্যাবিরীয় অধিনায়ক স্যামির। আশরাফুলের এক একটি আত্মবিশ্বাসী শর্ট যেন পুরনো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। মনে করে দিচ্ছিল ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১১৮ বলে ১০০ ও নটিংহামশায়ারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৪ বলে ৯৪ রানের কথা। কিন্তু তার অবিবেচকের মতো আউট হওয়ার দৃশ্যটি হয়ে থাকল বোকামির দৃশ্য হয়ে। ২৯ বলে ৩২ রান করে উইকেটের বাইরের বল মেরে রামদিনের গ্লাভসবন্দী হন। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দ্যুতি ছড়িয়েছেন কাপালি। ৯ ওভারে ৩২ রানে নিয়েছে ২ উইকেট। ব্যাটিংয়ে রান করেছেন ৪১। আলো ছড়ানো ইনিংস হলেও যত অতৃপ্তি আউট হওয়া নিয়ে। উইকেটের বাইরের বল অহেতুক খেলতে যেয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ।

ফতুল্লার ব্যাটিং উইকেটে সফরকারীদের ২১৭ রানে আটকে দিয়ে জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল বিসিব একাদশ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের খেয়ালিপনা ব্যাটিংয়ে বড় ব্যবধানেই হার মানে বিসিবি একাদশ। আশারাফুল-কাপালি ছাড়া আর কেউ নিজেকে মেলে ধরতেই পারেননি। এরমধ্যে পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটা পার করতে পারেননি। ব্যাটিং উইকেটে উল্টো দাপট দেখিয়েছেন ক্যাবিরীয় পেসার দিনেশ রামপাল। মাত্র ২৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। অবশ্য উইকেট পতনে ক্যারিবীয় বোলারদের চেয়ে বিসিবি একাদশের ব্যাটসম্যানদের শর্ট সিলেকশনে অদূরদর্শীতাই দায়ী বলে মনে করেন কাপালি।

শুভাগত হোম, অভিষেক ম্যাচেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আলো ছড়িয়েছিলেন। সেই আলোকে কোথায় আরও প্রজ্বলিত করবেন, তা না করে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে রেখেছেন। প্রস্তুতির বিসিবি কাপেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। গতকালও রাসেলের বলে মিড উইকেটে কাইরন পাওয়েলের হাতে সহজ ক্যাচ দেন শুভাগত। নাঈম ইসলামও নিজের ছাড়া থেকে বের হয়ে আসতে পারলেন না। রামপালের বলে কাভারে স্যামিকে যেন ক্যাচ প্রাকটিস করালেন।

আর শাহরিয়ার নাফিস ৫১ বলে মাত্র ১৬ রান যেভাবে আউট হলেন তার ব্যাখা শুধু তিনিই দিতে পারেন। আলাউদ্দীন বাবুকে হতভাগাই বলতে হয়। আগের বলেই লং অফে ডেনজা হায়াত তার সহজ ক্যাচটি ফেলে দিয়ে নতুন জীবন দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। স্যামুয়েলসের পরের বলেই পরের বলেই মিড উইকেটে মার্টিনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে জানিয়ে দিলেন কারও করুণা গ্রহণ করেন না বাবু! শেষ ভরসা ছিল নাসির। তিনিও ফতুল্লার দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ২১ রান করে নাসির যেভাবে স্যামুয়েলসের বলে পুল খেলে উইকেটরক্ষক রামদিনকে ক্যাচ দেন, এই আউটকে বোকামি ছাড়া অন্য কিছু বলাই বাহুল্য।

৪৫ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের জয় দেখতেই গতকাল বড় আশা করে দর্শকরা ফতুল্লা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়েবালি। বোলিংয়ে কিছুটা আলো ছড়ালেও ব্যাটিং-ফিল্ডিং ছিল খুবই হতাশার। এক ম্যাচে তিন তিনটি ক্যাচ ফেলে দিলে আর কিবা করার থাকে বোলারদের। অষ্টম ওভারে নিজের বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন আলাউদ্দীন বাবু। দশম ওভারে নাঈমের বলে লং অনে ক্যাচ মিস করে পাওয়েলকে নতুন জীবন দেন সোহাগ গাজী। একটি সহজ ক্যাচ মিস করেছেন শাহরিয়ার নাফিসও। প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হারটা হতে পারে জাতীয় দলের জন্য সতর্ক সংকেত। এই পরাজয় থেকে কিছু শিখতে না পারলে সামনে আবারও যে লজ্জায় পড়তে হবে

No comments:

Post a Comment