Sunday, October 9, 2011

দণ্ড মওকুফের সব চেষ্টাই চালিয়েছে বাংলাদেশ

সৌদি আরবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে শিরশ্ছেদ করা আট বাংলাদেশিকে বাঁচাতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সৌদি বাদশাহর কাছে অনুরোধ করেন। নিহতদের আত্মীয়স্বজনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে 'ব্লাড মানি' দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু দণ্ড মওকুফের ক্ষমতা শুধু নিহতের আত্মীয়স্বজনের হাতে থাকায় কোনো আবেদন-নিবেদনই কাজে আসেনি। শুক্রবার আসর নামাজের পর প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়েছে তাদের। এমনকি তাদের লাশও ফেরত দেবে না সৌদি সরকার। গতকালই তাদের লাশ সৌদি আরবেই দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রিয়াদ দূতাবাস সূত্র। রিয়াদ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর হারুন-উর-রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শুক্রবার বিকালে আসরের নামাজের পর স্থানীয় আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে এদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন_ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কামারপুর গ্রামের মিলন মিয়ার পুত্র সুমন মিয়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পূর্বশুভা গ্রামের আবদুল হাইয়ের পুত্র সুমন, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পূর্বশুভা গ্রামের (ডাকঘর : কস্তুরিপাড়া) শামসুল হকের পুত্র মাসুদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আবদুল্লাহপাড়া গ্রামের (ডাকঘর : চৌবাড়ী) আবদুল মান্নান সরকারের পুত্র মামুন, টাঙ্গাইলের সফিপুর উপজেলার ভাতকুরারচালা গ্রামের (ডাকঘর : হতেয়া রাজবাড়ী) খোয়াজউদ্দিনের পুত্র শফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পইয়াকান্দি গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র ফারুক, ফরিদপুরের আহম্মদ বিশ্বাসের পুত্র আবুল হোসেন এবং ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের শহিদ খানের পুত্র মতিয়ার রহমান। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে একটি মার্কেটে ডাকাতি করার সময় এক মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করে দণ্ডিত বাংলাদেশিরা। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ এবং উচ্চতর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনক্রমে এ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। শ্রম কাউন্সিলর হারুন-অর-রশীদ বলেন, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে কিছুই জানানো হয়নি। কারণ সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো বিদেশী নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে অবহিত করে না। দণ্ড কার্যকর এবং মৃতদেহ স্থানীয়ভাবে দাফনের পর সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকর ও গৃহীত ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে অবহিত করা হয়। সে অনুসারে আমরাও দণ্ড কার্যকর সম্পর্কে আগে কোনো তথ্য পাইনি। তবে রিয়াদ কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের মাধ্যমে আমরা শুক্রবার সন্ধ্যায় রায় কার্যকরের বিষয়টি অবহিত হই। দণ্ডিতদের অপরাধ সম্পর্কে শ্রম কাউন্সিলর বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আট বাংলাদেশিসহ মোট ১১ বাংলাদেশি ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল রিয়াদে এক গুদাম থেকে বৈদ্যুতিক তার চুরির সময় সে গুদামের মিসরীয় গার্ড হাসান আল সাইদকে হত্যা করে। অভিযুক্তরা আদালতে তাদের এ কাজের কথা স্বীকারও করেন। আসামিদের স্বীকারোক্তি ও পারিপাশ্বর্িক ঘটনাবলি বিচার করে আসামিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, নরহত্যা এবং জমিনে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারিক আদালত এ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও বেত্রাঘাতের দণ্ড দেন। শ্রম কাউন্সিলর জানান, শিরশ্ছেদ করা ব্যক্তিদের লাশ ইতোমধ্যেই স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে সৌদি আরবেই দাফন করা হয়েছে। সৌদি আইন অনুসারে, এ ধরনের লাশ ফেরত দেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় রিয়াদেই দাফন করা হয়েছে। তাই লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তারপরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শ্রম কাউন্সিলর আরও জানান, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের ডাকাতির ঘটনার রায় হয় ২০০৮ সালে। এরপর থেকেই বিভিন্ন উপায়ে দণ্ড কমানো বা মওকুফের চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে সৌদি বাদশাহর কাছে অনুরোধও জানানো হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবের আইন অনুসারে, এসব ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির পরিবার ছাড়া আর কেউ দণ্ড মওকুফের ক্ষমতা রাখেন না। নিহতের পরিবারও দণ্ড মওকুফে রাজি হয়নি। প্রচলিত একটি নিয়মানুসারে, নিহতদের পরিবারকে 'ব্লাড মানি' বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ প্রদানের বিষয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাব নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন প্রত্যাখ্যান করেন। নিহত হাসান আল সাইদ মিসরের প্রত্যন্ত জনপদ শারকাইয়া এলাকার অধিবাসী। তারা মনে করে হত্যার বদলে মৃত্যুদণ্ডই কেবল একমাত্র শাস্তি। তাই দূতাবাসেরও করার কিছু ছিল না বলে জানান শ্রম কাউন্সিলর।

No comments:

Post a Comment